বাংলাদেশের ইতিহাস: একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ার একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের দেশ, যার ইতিহাস গভীরভাবে জড়িত সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিবর্তনের সঙ্গে। এই ভূখণ্ড প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ পর্যন্ত এক বিস্ময়কর যাত্রার সাক্ষী।
প্রাচীন ও মধ্যযুগের ইতিহাস
বাংলাদেশের ভূমি একসময় ছিল প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রস্থল। গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর উর্বর তীরবর্তী এই অঞ্চল ছিল বহু সাম্রাজ্যের উত্থান ও পতনের সাক্ষী।মৌর্য ও গুপ্ত সাম্রাজ্য: খ্রিস্টপূর্ব ৩২১ থেকে ৫৫০ সালের মধ্যে মৌর্য এবং পরে গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসনাধীন এই অঞ্চল অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধিতে সমৃদ্ধ হয়পাল ও সেন সাম্রাজ্য: পাল রাজবংশ (৭৫০-১১৭৪ খ্রিস্টাব্দ) বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাল যুগকে বাংলার "সুবর্ণযুগ" বলা হয়। পরে সেন বংশের শাসনে হিন্দুধর্ম আরও প্রসারিত হয়।
ইসলামের আগমন ও সুলতানি যুগ
৮ম শতাব্দীর শেষের দিকে ইসলাম এই অঞ্চলে প্রবেশ করে আরব বণিকদের মাধ্যমে। ১২০৪ সালে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাসে মুসলিম শাসনের সূত্রপাত ঘটে। এরপর দীর্ঘ সুলতানি ও মুঘল শাসনের সময় এই অঞ্চল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
মুঘল যুগের সমৃদ্ধি
মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে বাংলা "মোগল উপাধির সোনার বাটি" হিসেবে খ্যাতি পায়। ঢাকাকে মুঘলরা বাংলার রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলে। ঢাকার মসলিন ছিল তখনকার সময়ের বিশ্ববিখ্যাত পণ্য।
ব্রিটিশ উপনিবেশ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম
১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার শাসনভার গ্রহণ করে। ব্রিটিশ শাসনকালে বাংলার কৃষকদের ওপর শোষণ এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দুঃখ-দুর্দশা চরমে পৌঁছায়বাংলা ভাগ (১৯০৫): ব্রিটিশ শাসনের একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল বঙ্গভঙ্গ, যা বাংলার মানুষের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি করে এবং প্রথমবারের মতো একটি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের জন্ম দেয়।১৯৪৭-এর দেশভাগ: ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দেশভাগের মাধ্যমে। পূর্ব বাংলা পাকিস্তানের অংশ হয় এবং পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের শিকার। ভাষা আন্দোলন, অর্থনৈতিক বৈষম্য, এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লড়াই একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মের ভিত্তি তৈরি করে।ভাষা আন্দোলন (১৯৫২): বাঙালির ভাষার অধিকারের জন্য এই আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১): ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায়।
স্বাধীনতার পরবর্তী বাংলাদেশ
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ শুরু করে নতুন যাত্রা। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে দেশটি এগিয়ে যায়। আজ, বাংলাদেশ একটি উদীয়মান অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি।
0 Comments